অসুস্থ খালেদা জিয়াকে দেখে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে গেলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার তিন চিকিৎসক। খালেদা জিয়া অস্ত্রোপচারের পর স্থিতিশীল রয়েছেন।
শুক্রবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যান চিকিৎসকরা। এদিনই খালেদা জিয়াকে কেবিনে নেওয়া হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জানান, যুক্তরাষ্ট্র থেকে যে তিন চিকিৎসক বাংলাদেশে এসেছিলেন শুক্রবার রাতে তাদের দুজন ফিরে গেছেন। বাকিজন শনিবার ফিরে গেছেন।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, গত ২৫ অক্টোবর দিবাগত রাতে খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা দিতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তিন চিকিৎসক বাংলাদেশে আসে। তারা হলেন— যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস ইউনিভার্সিটির স্কুল অব মেডিসিনের লিভার ও কিডনি প্রতিস্থাপন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক হামিদ আহমাদ আবদুর রব, ইন্টারভেনশনাল অনকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ক্রিসটোস স্যাভাস জর্জিয়াডেস ও হেপাটোলজির অধ্যাপক জেমস পিটার হ্যামিলটন। এই তিন চিকিৎসকের নেতৃত্বে এভারকেয়ার হাসপাতালে ২৬ অক্টোবর খালেদা জিয়ার যকৃতের রক্তনালিতে সফল অস্ত্রোপচার হয়।
পর দিন এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘ম্যাডামের চিকিৎসার জন্য বিদেশে থেকে তিন জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এসেছিলেন। গতকাল সন্ধ্যায় তারা অত্যন্ত সফলভাবে, তারা যে কাজে এসেছিলেন, সেই পদ্ধতি (অপারেশন) তারা করতে পেরেছেন।’
চিকিৎসকদের একটি সূত্র বলছে, বিদেশি চিকিৎসকদের এই অস্ত্রোপচারের ফলে খালেদা জিয়ার লিভার সিরোসিসজনিত যে জটিলতা তার কিছুটা উপশম হবে। তবে তার প্রকৃত চিকিৎসা করতে হলে বিদেশে উন্নত মাল্টিসেন্টারে নিতে হবে।
বিএনপির চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান সোমবার যুগান্তরকে বলেন, বর্তমান এভারকেয়ার হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চলছে।
৯ আগস্ট থেকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি খালেদা জিয়া। এরমধ্যে বেশ কয়েক দফা তাকে সিসিইউতে নিয়ে চিকিৎসা দিতে হয়েছে। শ্বাসকষ্ট ও ফুসফুসে পানি জমে যাওয়ায় সোমবার রাত পৌনে ৪টার দিকে তাকে হাসপাতালের সপ্তম তলার কেবিন থেকে চতুর্থ তলায় সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। তিনি শারীরিকভাবে খুব দুর্বল বলে জানা গেছে।
এর আগে ১০ অক্টোবর খালেদা জিয়াকে সিসিইউতে নেওয়া হয়।
৭৮ বছর বয়সি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, হার্ট ও চোখের সমস্যাসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছেন।
এর আগেও শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় ১০ জুন রাত পৌনে ৩টার দিকে খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল।
গত বছরের ১০ জুন গভীর রাতে বুকে ব্যথা নিয়ে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের অধীনে ভর্তি হয়েছিলেন খালেদা জিয়া। পরে দ্রুত এনজিওগ্রাম করে তার হার্টে একটি রিং বসানো হয়। হার্টের দুটি ব্লক এখনো রয়ে গেছে।
এর আগে ২৭ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে যান। গত বছরের ২২ আগস্টও স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে গিয়েছিলেন। এক সপ্তাহ পর ২৮ আগস্ট ফের হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে ভর্তি করানো হয়। দুদিন হাসপাতালে থাকার পর ৩১ আগস্ট বাসায় ফেরেন খালেদা জিয়া।
খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে কারাগারে গিয়েছিলেন। দেশে করোনা মহামারি শুরুর পর পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ তাকে নির্বাহী আদেশে ‘সাময়িক মুক্তি’ দেয় সরকার। এর পর কয়েক দফা তার দণ্ডাদেশ স্থগিতের মেয়াদ বাড়ানো হয়।