রোববার (৮ অক্টোবর) বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সোমবার সকাল ৯টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের কনফারেন্স হলে (১১ তলায়, ব্যাজমেন্টের লিফটে যেতে হবে) বিএনপি চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থা জানাতে মেডিকেল বোর্ড সংবাদ সম্মেলন করবে।
শারীরিক অবস্থার তারতম্যের কারণে চলতি মাসে কয়েক দফায় বেগম খালেদা জিয়াকে হাসপাতালের কেবিন ও সিসিইউতে স্থানান্তর করার ঘটনা ঘটে। হাসপাতাল সূত্র জানায়, দুই মাসের বেশি সময় ধরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়া। তবে তার শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে। লিভার সিরোসিসের সমস্যার কারণে তার লিভারট্রান্সপ্ল্যান্ট করতে হবে। আর তা না করা গেলে হার্ট ও কিডনি জনিত রোগেরও যথাযথ ট্রিটমেন্ট দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
৭৮ বছর বয়সী খালেদা জিয়া হার্টের সমস্যা ও লিভারসিরোসিস ছাড়াও নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। এছাড়া, আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, দাঁত ও চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতা রয়েছে তার। এরই মধ্যে কয়েক দফা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন তিনি। গত বছরের জুনে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রাম করা হলে তার হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়।
আরও পড়ুন: খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার আবেদন, সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা চাইতে পারে পরিবার
এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার আবেদন নাকচের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি করতে পারেন স্বজনরা।
খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, বেগম জিয়ার জীবন মৃত্যু নিয়ে কেন ঝুঁকি নিচ্ছে সরকার, এটি বোধগম্য নয়। এরপরও পরিবারের চাইলে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা চাইতে পারবে। আর দলীয়ভাবে বসে পরবর্তী করণীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, আদালতের সমস্ত কিছু প্রসেস এডজাস্ট করেই আমরা ৪০১ ধারা প্রয়োগের জন্য বলেছি। সরকার মানবিক দিকটা বিচার বিশ্লেষণ না করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে খালেদা জিয়াকে বাঁচিয়ে রাখতে চায় না। তবে বিদেশে চিকিৎসার আবেদন নাকচের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা চাইতে পারে পরিবার।
এদিকে অতিরিক্ত অ্যার্টনি জেনারেল মেহেদী হাসান চৌধুরী বলেন, খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ নিতে হলে দুটি পথে হাঁটতে হবে। একটি শর্তসাপেক্ষে মুক্তির আদেশ বাতিল চাওয়া, বাতিল হলে জেলে গিয়ে আবেদন করা। অন্যটি অপরাধ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে সাজা মওকুফের আবেদন করা।
দুটি মামলায় সাজা হওয়ায় কারাবন্দি ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। বর্তমানে নির্বাহী আদেশে দণ্ড স্থগিত থাকায় তিনি কারামুক্ত রয়েছেন।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ আদালত। রায়ের পর তাকে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পুরানো কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রাখা হয়। এরপর ৩০ অক্টোবর এই মামলায় আপিলে তার সাজা আরও পাঁচ বছর বাড়িয়ে ১০ বছর করেন হাইকোর্ট।
একই বছরের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১০ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ড দেন একই আদালত।
২০২০ সালের মার্চে করোনা মহামারি শুরু হলে পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে সরকার নির্বাহী আদেশে দণ্ড স্থগিত করে খালেদা জিয়াকে শর্তসাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দেয়। এরপর থেকে মুক্তির মেয়াদ বাড়তে থাকায় তাকে আর কারাগারে যেতে হয়নি।